ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন—তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না কেন? তাঁর বাংলাদেশ-প্রেম নিয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে? আসল সত্যটি এর চেয়ে অনেক গভীর, অনেক বেশি মানবিক। এর ভেতরে আছে মায়ের প্রতি সন্তানের অশেষ ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, নিরাপত্তা-শঙ্কা এবং অতীতের অমানবিক অভিজ্ঞতার দগদগে স্মৃতি।
তারেক রহমান বহুবার বলেছেন—বাংলাদেশই তাঁর হৃদয়, তাঁর ঘর, তাঁর শেকড়। তাঁর মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া—যাঁর কঠিন অসুস্থতা তাঁকে প্রতিটি মুহূর্তে তাড়িয়ে বেড়ায়। একজন সন্তানের জন্য এর চেয়ে বড় বেদনা আর কী হতে পারে? প্রতিদিন তাঁর একটাই আকুল প্রশ্ন—“কবে আমি মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারব?”
কিন্তু বাস্তবতা নিষ্ঠুর। চিকিৎসকদের মতে, বেগম জিয়ার জীবনের জন্য জরুরি উন্নত চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন। যেকোনো মুহূর্তে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নিয়েই লন্ডনে দিন কাটাচ্ছেন তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। লন্ডন এখন তাঁদের জন্য বিশ্রামের স্থান নয়—এটি হয়ে উঠেছে মায়ের জীবনরক্ষার অপেক্ষার ঘর। বিশ্বের সেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ, চিকিৎসার প্রতিটি ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা—এই দায়িত্বই তাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
সন্তানের মায়ের প্রতি এই ভালোবাসার বাইরেও রয়েছে একটি বড় ও গভীর রাজনৈতিক বাস্তবতা। বাংলাদেশে এখনো তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর শঙ্কা রয়েছে। ফখরুদ্দিন-মইন মদদপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের নামে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তখন আইনের ন্যূনতম সুরক্ষা পাননি। মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি নীরব ছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সেই নির্মম অভিজ্ঞতা এখনো তাঁর পরিবার ও দলের স্মৃতিতে তাজা। রাষ্ট্র যখন প্রতিশোধের মাধ্যমে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে, তখন সুরক্ষা ছাড়া দেশে ফেরা বীরত্ব নয়—এটি ঝুঁকির ফাঁদ।
এই কারণেই তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু আবেগের বিষয় নয়; এটি দায়িত্ব, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নিরাপত্তার হিসাবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তবুও দূর দেশে থেকেও তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার এবং দেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের সংগ্রামে। কৃষি, স্বাস্থ্য, নারী ও যুব উন্নয়ন—সবক্ষেত্রে তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনা আজ বিএনপির নীতিনির্ধারণে প্রাধান্য পাচ্ছে। দূরত্ব তাঁর নেতৃত্বকে দুর্বল করেনি; বরং আরও দৃঢ় করেছে।
যারা প্রশ্ন তুলছেন—“এখনই কেন ফিরছেন না?”—তাদের মনে রাখা প্রয়োজন: দায়িত্ববান নেতা কেবল আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন না। সঠিক সময়, নিরাপদ পরিবেশ এবং পূর্ণ রাজনৈতিক প্রস্তুতির অপেক্ষাই একজন বিচক্ষণ নেতার পরিচয়।আজ তাঁর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব—মাকে বাঁচানো। আর দেশের জন্য তাঁর সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার—একদিন ফিরে এসে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার করা।
তারেক রহমানের দেশপ্রেম নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর ফেরা হবে—কিন্তু তা হবে শক্তভাবে, নিরাপদে এবং দেশ নেতৃত্বের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে।
সেই প্রত্যাবর্তনই হবে বাংলাদেশের নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের সূচনাবিন্দু।
লেখক: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ