মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল গ্রুপ জলমহালে মাছ চুরিতে বাঁধা দেয়ায় দুইজন পাহারাদার ও একজন ব্যবসায়ীর ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে হাওর এলাকায় সংঘবদ্ধ জেলেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বাদী হয়ে গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন চকিয়া বিলের বর্তমান ইজারাদার এডভোকেট মো. মাসুক মিয়া।
থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ১৪৩৩-১৪৩৪ বাংলা সনে হাকালুকি হাওর এলাকায় কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় কেবি এহিয়া ওয়াক্ফ এস্টেট সিলেটের মালিকানা ‘চকিয়া বিল গ্রুপ’ (বদ্ধ) জলমহালের ইজারাদার হয়ে দখলদেহী হন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা এডভোকেট মো. মাসুক মিয়া। বর্তমানে জলমহালে মৎস্য প্রজননকালীন সময়। ইজারাদার মাসুক মিয়া গং অনেক টাকা খরচ করে জলমহালে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। তারা জলমহালের মধ্যখানে দলকাঁঠা লাগিয়ে পাহারাদার নিয়োগ করে জলমহালে মৎস্য সংরক্ষণ করছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অবৈধভাবে মাছ চুরির অভিযোগে কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার ফুট নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছেন।
হাওর এলাকার কুলাউড়ার সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা সংঘবদ্ধ জেলে চক্রের সদস্য মোস্তাক মিয়া (৩৫), সাজ্জাদ মিয়া (৪০), নুরুল ইসলাম (৪৮), খছরু মিয়া (২২), কাইয়ুম উদ্দিন (৩৫), ফাহিম মিয়া (১৯) সহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জন লোকজন বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বড় মাছ শিকারের ফান্দা জাল সহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ জাল দিয়ে জলমহাল থেকে অবাধে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার দিন গত ২ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা জলমহালের পাহারাদার গৌরা বিশ্বাস ও বিরাই মিয়া জলমহালে পাহারারত অবস্থায় দেখতে পান যে, জলমহালের মধ্যবর্তী দলকাঁঠা লাগানো স্থানে আসামীরা বড় মাছ শিকারের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল (ফান্দা জাল) দিয়া মাছ ধরছেন। গৌরা বিশ্বাস ও বিরাই মিয়া আসামীদেরকে জলমহাল থেকে মাছ চুরি করিতে বাধা প্রদান করলে আসামীরা তা অমান্য করলে পাহারাদার গৌরা বিশ্বাস মোবাইল ফোনে ঘটনাটি ইজারাদার মাসুক মিয়াকে অবগত করেন। পরে ইজারাদার মাসুক মিয়া তার ব্যবসায়ীক অংশীদার গণি মিয়াকে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানান। এরপর গণি মিয়া অন্যান্য পাহারাদারদের নিয়ে চকিয়া বিলে উপস্থিত হলে আসামীদেরকে মাছ চুরি করতে বাঁধা দিলে আসামীরা বিলের পাহারাদার ও ইজারাদারের সহযোগীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে আসামীরা দলবদ্ধভাবে ৮টি নৌকা যোগে দা, লগি, বৈঠা সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাহারাদার ও ব্যবসায়ীর ওপর হামলা চালায়। জেলে মোস্তাক মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, খছরু মিয়া, কাইয়ুম উদ্দিন ও ফাহিম মিয়া গংয়ের হামলায় গুরুতর আহত হন চকিয়া বিলের পাহারাদার আব্দুস সামাদ, আসুক মিয়া ও বিলের ইজারাদারের সহযোগী গণি মিয়া। এসময় আসামীরা আহত ব্যক্তিদের হাতে থাকা ৪টি মোবাইল ফোন (যারমূল্য ৮০ হাজার টাকা) চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ১০ মণ মাছ চুরি করা হয়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেন। বর্তমানে পাহারাদার সামাদ সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর ইজারাদারের সহযোগি গণি মিয়া চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলে মোস্তাক মিয়া গংয়ের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক বলেন, এ ঘটনায় লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। #