অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স দ্রুত বাড়তে থাকায় বিশ্ব নতুন বিকল্প চিকিৎসার সন্ধান করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পদ্ধতি হলো ব্যাকটেরিওফাজ থেরাপি, যেখানে বিশেষ ধরনের ভাইরাস (ফাজ) ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়। ফাজ হলো এমন ভাইরাস যা কেবল ব্যাকটেরিয়াকেই আক্রমণ করতে সক্ষম এবং মানবকোষে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না; ফলে এটি মানুষের জন্য স্বাভাবিকভাবে নিরাপদ (Sulakvelidze et al., 2001)।
ফাজ থেরাপির কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত নির্দিষ্ট ও বৈজ্ঞানিক। প্রথমে ফাজ ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর বা ক্যাপসুলের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়। এরপর এটি নিজের জিনোম ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে প্রবেশ করায় এবং ব্যাকটেরিয়ার মেটাবলিক মেশিনারিকে দখল করে দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে। শেষ পর্যায়ে ফাজ লাইসিন নামক এনজাইম নিঃসরণ করে ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ভেঙে ফেলে, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং নতুন ফাজ কণা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে (Abedon et al., 2011)।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর উচ্চ নির্দিষ্টতা। একটি ফাজ সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি বা এমনকি নির্দিষ্ট স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেই কার্যকর হয়। ফলে মানবদেহের উপকারী মাইক্রোবায়োম অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না—যা আধুনিক চিকিৎসায় একটি বড় সুবিধা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিৎসায় ফাজ থেরাপি উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে Acinetobacter baumannii-জনিত মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত এক রোগীর জীবন রক্ষায় ফাজ থেরাপি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয় (Schooley et al., 2017)। একইভাবে Nature Medicine-এ প্রকাশিত আরেকটি কেস স্টাডিতে দেখা যায়, Mycobacterium abscessus–এর মতো অত্যন্ত প্রতিরোধী সংক্রমণে জিন-ইঞ্জিনিয়ার্ড ফাজ জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা হিসেবে কাজ করেছে (Dedrick et al., 2019)। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় ফাজ থেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে—যেমন প্রতিটি ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপযুক্ত ফাজ সনাক্তকরণ প্রয়োজন, মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম কখনো ফাজকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে, এবং বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত গাইডলাইন এখনো সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত নয় (Pirnay et al., 2018)। তবুও, একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বিশেষ করে মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (MDR) সংক্রমণে ফাজ থেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর বিকল্প হতে পারে (Lin et al., 2017)।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প বা সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ভাইরাস ব্যবহারের এই কৌশল—ব্যাকটেরিওফাজ থেরাপি—চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যতের একটি বাস্তবসম্মত, সম্ভাবনাময় এবং দ্রুত বিকাশমান দিক। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এটি মূলধারার চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হয়ে উঠতে পারে।