‘৭৫-৯৬ এই ২১ বছরে আমাদের সংস্কৃতির অনেক কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির ‘শ্রদ্ধায় স্মরণে ৭৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠান তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন ১৪ আগস্ট আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরের দিন মুক্তির দূত শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। ক্যাম্পাস উচ্ছ্বসিত। বারবার মনে পড়ছে, প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বঙ্গবন্ধুর জন্য ভালোবাসার পুষ্পের পাপড়ি নিয়ে। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগেই ভালোবাসার পুষ্প রক্তাক্ত হয়ে গেল। ৩২ নম্বরের বাড়িটি রক্তের সমুদ্র হয়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের জন্ম নিল ৩২ নম্বরে। বেতার হয়ে গেল রেডিও, জয় বাংলা হয়ে গেল জিন্দাবাদ। বিপ্লবের বিপরীতে প্রতিবিপ্লব ঘটে গেল। ক্রিয়ার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া। যার শ্রম ঘাম ও নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা রচিত হলো, তারই রক্তে রঞ্জিত হলো স্বাধীন বাংলাদেশ। মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি মনে করি মোশতাক-জিয়া গং জড়িত না থাকলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল না। এজন্যই পুরস্কার হিসেবে জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল প্রমাণ চান, আমি বলি— মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে কে সংসদে পাশ করিয়েছিল? কে বিচার বন্ধ রেখেছিল? কে খুনিদের দূতাবাসে চাকরি ও প্রমোশন দিয়েছিল? জবাব দিন ফখরুল সাহেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণস্থলে শিশু পার্ক কে বানিয়েছিল? জয় বাংলা কেন নির্বাসনে ছিল? কেন ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল? কেন মহানায়ক নির্বাসিত ছিলেন? ৩২ নম্বর ও টুঙ্গিপাড়া কেন নিষিদ্ধ ছিল? ঘোষণার পাঠককে কেন ঘোষক বানানো হয়েছিল? ফুটনোটকে বানানো হলো মহানায়ক। কেন এসব হয়েছিল জবাব দিন ফখরুল সাহেব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গনে নেমে এসেছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। এরপরে ইতিহাসের বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮১ সালে মুজিবকন্যা স্বদেশে ফিরলেন। শক্তিশালীভাবে উচ্চারিত হতে শুরু করে জাতির পিতা হারানোর বেদনার কথা, সেই বেদনা থেকে উৎসারিত হয় ক্ষোভ। ক্ষোভের অগ্নিমশাল ইতিহাস খুঁড়ে সত্য বের করে আনে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জেগে আছেন বলেই বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। তিনিই আমাদের সংস্কৃতির পুরোধা এবং অভিভাবক। ৭৫-৯৬ এই একুশ বছর আমাদের সংস্কৃতির অনেক কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যতদিন বাংলায় চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, যতদিন বাংলা নামের দেশ থাকবে বিশ্ব মানচিত্রে, ততদিন বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার ক্ষমতা কারো নেই।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য সংঘটিত হয়নি। বরং মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি ধ্বংস করে পাকিস্তানি ভাবধারার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই ছিল খুনিদের লক্ষ্য। এজন্যই খুনিরা জয় বাংলার বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ চালু করেছিল।’
সভাপতির শোক সম্ভাষণে আতাউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব ইতিহাসে বহু রাষ্ট্রনেতা ও জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের নজির আছে। কিন্তু আমাদের জাতির পিতার মতো সপরিবারে নৃশংস হত্যার শিকারের নজির দ্বিতীয়টি নেই।’
সংস্কৃতি-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল তার অনানুষ্ঠানিক প্রারম্ভিকতায় ১৫ আগস্টের সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘একদা যদি বাংলাদেশ নামক দেশটি সাগরতলে বিলীন হয়েও যায়, যদি একজন বাংলাদেশের বাঙালি জীবিত না-ও থাকে, তবুও পৃথিবীতে চলমান সভ্যতার ধারাবাহিকতা যদি বহাল থাকে, যদি পৃথিবীর কোনো প্রান্তে ভূগোল পড়ানো হয় কিংবা যদি একজন ছাত্রও বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস পাঠ করে, তাহলেও সভ্যতা নামক সময়কে ধারণ করা ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রধানতম পুরুষ হিসেবে শেখ মুজিবের কথা পড়তে হবে। বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কথা পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমাদের জাতির পিতা পৃথিবীর সভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে আলোচিত হবেন, চর্চিত হবেন দুনিয়া জুড়ে। রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু আমাদের এই সভ্যতাকে বাধ্য করে গেছেন তাকে অবনত মস্তকে স্মরণ করতে, শ্রদ্ধা করতে এবং তার জন্য অশ্রুজল বিসর্জন দিতে।’
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বলেন, ‘আগস্ট এলেই মনে হয় এই বুঝি এলো হায়েনার দল, শকুনের দল। তারা আসেও বারবার। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক এবং রক্তের উত্তরাধিকার বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর, ডালিয়া আহমেদ ও শিমুল মুস্তাফা।
সর্বশেষে বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদলের অভিনীত অভিশপ্ত আগস্ট নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি রচনা করেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান এবং পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিলেন পুলিশের সদস্যরা।
আয়োজনের মধ্যে ছিল স্মরণ-শ্রদ্ধা, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত রচিত কবিতা থেকে আবৃত্তি এবং অভিশপ্ত আগস্ট নামে একটি নাটক। ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় ১ মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির শোক-সম্ভাষণ প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মঞ্চসারথি আতাউর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন, অ্যাড. এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন।
আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি লায়ন সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর লস্কর।