সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
আমরা সকলকে নিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই – ইঞ্জিনিয়ার এম সায়েদ আলী কুলাউড়ায় অবৈধভাবে বালু সরিয়ে জরিমানা গুনলেন সজল প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিতে প্যারিসে আজ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান সিলেট উইমেন চেম্বারের সভাপতি লুবানা ইয়াছমিন শম্পা কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের নিয়ে জামায়াত আমীরের মতবিনিময় কুলাউড়ায় বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হাকালুকির চকিয়া বিলে মাছ চুরিতে বাঁধা দেয়ায় পাহারাদারের ওপর হামলা কুলাউড়ায় আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় বিড়িসহ আটক ১ কুলাউড়া রাঙ্গীছড়া বাজারে জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় করলেন জেলা জামায়াত আমীর আনন্দ উল্লাসে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করলো পর্তুগাল বিএনপি

মৌলভীবাজারের কামরুলের ভিজিট ভিসার ফাঁদ! ৫০০ ভুক্তভোগীর ৩০ কোটি টাকা হাওয়া

কেবিসি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট : রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২

মৌলভীবাজারের কামরুল আহম্মেদ (৪২), লেখাপড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত। নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকলেও প্রতারণা এবং মানবপাচার তার নেশা। ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যান। মানবপাচারের অর্থে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা লাভ করেন। পরে প্রাইভেটকার চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন।

করোনার সংকট শুরু হলে গাড়িটি বিক্রি করে ২০২১ সালে দেশে ফেরেন। পুনরায় জড়িয়ে পড়েন প্রতারণা এবং মানবপাচারে।

র‍্যাব বলছে, জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই কামরুলের। বিভিন্ন ট্যুর ও ট্রাভেলস এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান তিনি। এজন্য জনপ্রতি হাতিয়ে নেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব-৩। চক্রের বাকিরা হলেন- খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ (৩৮) ও মো. জামাল (৪২)।

সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিমানবন্দরে প্রদর্শনের পর ভিসা ও টিকিট জাল হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।

এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। গত ১২ এপ্রিল মৌলভীবাজারের এক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কামরুল রামপুরায় চক্রের সদস্য কামরুলের বাসায় নিয়ে আসেন। ওই বাসায় ভুক্তভোগী নারীকে আটক করা হয়। পরে চক্রের সদস্য তোফায়েল জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে র‍্যাবের একটি দল ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ৩টার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়া নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তোফায়েল গৃহকর্মী হিসেবে তাকে সৌদি আরব পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এরপর সৌদিআরব যেতে হলে আরবি ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এ কথা বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে ও কামরুলের বাসায় আটক রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

র‍্যাব-৩ এর সিও বলেন, ঘটনার পর ওই নারী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী নারীর দেওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুল, সহযোগী খালেদ মাসুদ হেলাল, তোফায়েল ও জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, ১টি কম্পিউটার, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকিট, ৪টি মোবাইল ফোন ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের বরাতে র‍্যাব-৩ সিও বলেন, কামরুল এই মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছিল। চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতিদের নিকট থেকে ৫-৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে জাল ভিসা ও টিকিট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যরা যোগাযোগ বন্ধ করে বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলে। এভাবে গত ২ বছরে অন্তত আটবার ঠিকানা পরিবর্তন করেছে চক্রটি।

গত ৫ বছরে চক্রটি অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে জাল ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

চক্রের মূলহোতা কামরুল সম্পর্কে র‍্যাব-৩ সিও বলেন, জনশক্তি রপ্তানি লাইসেন্স না থাকায় বিভিন্ন ট্যুরস ও ট্রাভেলসের সাথে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে আসছিল কামরুল। তার নামে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার কোর্টে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার একটি মামলা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ৩৮ লাখ টাকার ওপরে আছে বলে জানিয়েছে কামরুল।

তার অন্যতম সহযোগী জামাল মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। একমাস আগে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি মানবপাচারের দায়ে র‍্যাব-৩ হাতে গ্রেপ্তার হয়।

জামাল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাঁচ বছর ধরে তিনি কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা এবং মানবপাচারের কাজ করে আসছিল। তার নামে মাদক মামলা রয়েছে।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা খালেদ ২০০১ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে মৌলভীবাজার রাজনগরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

তোফায়েলের পেশা ড্রাইভিং। মৌলভীবাজারে তার সিএনজি পার্টস এবং ডেকোরেটরসের ব্যবসা রয়েছে। অতি লাভের আশায় সেও কামরুলের অপকর্মের সঙ্গী হয়। উদ্ধার করা নারী তোফায়েলের গ্রামের আত্মীয়। ওই নারীর অসহায়ত্বের সুযোগে ধর্ষণের লক্ষ্য নিয়েই সৌদি আরবে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়েছিল। তোফায়েলের নামে একটি চুরি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ | কেবিসি নিউজ ফ্রান্স
Theme Developed BY NewsFresh